Home » প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছেনি ত্রাণ, ফেনীতে বানবাসিদের দূর্ভোগ বাড়ছে

প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছেনি ত্রাণ, ফেনীতে বানবাসিদের দূর্ভোগ বাড়ছে

by আজকের সময়
এম শরীফ ভূঞা, ফেনী :
ফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে হাজার হাজার মানুষ। ফেনী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ইতোমধ্যেই তলিয়ে জেলার অধিকাংশ এলাকা। এতে প্রায় ৮ লক্ষ বানভাসি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শহর থেকে পানি নামলেও গ্রামীণ এলাকার মানুষরা পানিবন্দি।
এসব এলাকার গ্রামীণ সব রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সারা দেশ থেকে ত্রাণ ও উদ্ধার কর্মীরা ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া উপজেলায় প্রবেশ করলেও ত্রাণ পাচ্ছেন না ফেনী সদর উপজেলার পানিবন্দি একশ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে এই উপজেলার নারী-শিশু, বৃদ্ধসহ সব বয়সি মানুষ।
ফেনীসহ বন্যাকবলিত বেশির ভাগ এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে। তবে দাগনভূঞার বিভিন্ন স্থানে পানি বাড়ার খবর পাওয়া গেছে। সেসব স্থানে পরিস্থিতি খানিকটা অবনতির দিকে। বাড়িঘর থেকে বন্যার পানি না সরায় অনেকে এখনো আশ্রয়কেন্দ্রেই আছেন।
বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে শুকনা খাবার, পানি, ওষুধপত্র বিতরণ অব্যাহত আছে। তবে প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায় অনেকে ত্রাণ পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। চার দিন পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশে যান চলাচল শুরু হয়েছে। তবে গতি ছিল কম।
ফেনী শহরে, পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ায় পানি কমছে। তবে ফেনী সদর, সোনাগাজী ও দাগনভূঞাতে বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় ও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় মানুষের দুর্ভোগ বেশি।
ফেনী শহরে তিন দিন পর কয়েকটি সড়ক থেকে পানি নেমে গেছে। শহরের উকিলপাড়ার বাসিন্দা কবি সজীব ওছমান জানান, গত শুক্রবার তাঁর বাসার একতলা পানিতে নিমজ্জিত ছিল, গতকাল সকাল থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।
বিশুদ্ধ পানির খোঁজে শহরের ট্রাঙ্ক রোডে আসা শাহীন একাডেমি এলাকার বাসিন্দা নঈম মোস্তাজির জানান, গত দুই দিন সেখানে কয়েক ফুট উচ্চতার বেশি বন্যার পানি প্রবাহিত হয়েছে। স্থানীয় দোকানগুলোতে খাবার পানি সংকট রয়েছে। নিত্যপণ্যের দাম নেয়া হচ্ছে দ্বিগুণ।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সরকারি ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে এখনো কোনো ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক দলের সামান্য কিছু উদ্যোগ ছাড়া ত্রাণ পাচ্ছেন না সদর উপজেলার একশত গ্রামের পানিবন্দি ৫০ হাজার মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে বন্যার্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা।
ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থী আবদুল আজিজ সায়েম জানান, ফেনী নদী ও ছোট ফেনী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকা গ্রামগুলোতে সরকারি কোনো ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দোকানপাটেও তেমন খাবার সামগ্রী নেই। থাকলেও দাম অনেক বেশি নেওয়া হচ্ছে। গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে প্রায় দুই-তিন গুণ বেশি দামে। সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এসব বিষয়ে তদারকি করে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা দেওয়া দরকার ।
সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বলেন, শশদী ইউনিয়নের আবুপুর, দক্ষিণ আবুপুর, কুমিরা, উজালিয়া, জাহানপুর ভাস্কর গ্রামের ৯ হাজার পরিবারের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে কতিপয় পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। তাদের শুকনো খাবার ও চাল ডাল দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
ব্যক্তিগত উদ্যোগে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খাওয়ার পরিবেশন করলেও অধিকাংশ মানুষ ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে বিভিন্ন ইউনিয়নে একজন করে ত্রাণ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। আশা করি, কয়েক দিনের মধ্যে পরিবেশ স্বাভাবিক হবে বলে প্রত্যাশা করেন জেলা প্রশাসন।

আরো খবর