কুলসুম আক্তার শারমিন :
প্রাথমিক শিক্ষায় বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য একটি কার্যকর শিখন পদ্ধতি নিশ্চিত করা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যারা তাদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সামগ্রিক বিকাশের অধিকার রাখে। তবে, তাদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা প্রদান করতে হলে বিশেষভাবে পরিকল্পিত একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। এই প্রক্রিয়ায় প্রথমত, শিশুদের জন্য একটি ব্যক্তিগত শিক্ষার পরিকল্পনা তৈরি করা অপরিহার্য, যার মাধ্যমে তাদের শারীরিক এবং মানসিক চাহিদা অনুযায়ী বিশেষ শিক্ষার লক্ষ্য ও উপকরণ নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি, শ্রেণীকক্ষে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা, যেমন সরল ভাষায় পাঠদান, ভিজ্যুয়াল সাহায্য এবং শ্রেণীকক্ষের বিন্যাস পরিবর্তন, শিশুদের শিক্ষার প্রক্রিয়া সহজ করতে সহায়ক। এছাড়া, প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন বিশেষায়িত শিক্ষামূলক সফটওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশন শিক্ষাকে আরও আকর্ষণীয় ও কার্যকরী করে তুলতে পারে। তবে, এসব কার্যক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রশিক্ষিত শিক্ষক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য প্রশিক্ষিত শিক্ষক তাদের আচরণ ও শিখন ক্ষমতা বুঝে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করতে সক্ষম হন। এ ছাড়া, অভিভাবকদের সক্রিয় অংশগ্রহণও অপরিহার্য; তারা শিক্ষকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখলে শিশুর অগ্রগতি সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানাতে পারবেন। সমাজের অন্যান্য সদস্যদেরও এই বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন হয়ে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য অবকাঠামো ও প্রশিক্ষণের অভাব, শিক্ষামূলক উপকরণের সীমাবদ্ধতা এবং সামাজিক সচেতনতার অভাব রয়েছে। তবে, সরকারের উদ্যোগ, বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। একটি কার্যকর শিখন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জীবনের মানোন্নয়ন ও তাদের সমাজে অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা সম্ভব, যা সমাজের সার্বিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে তাদের সম্ভাবনাকে পূর্ণাঙ্গভাবে কাজে লাগানো আমাদের সকলের দায়িত্ব।
লেখক : কুলসুম শারমিন। সহকারী শিক্ষক। বসুরহাট এস এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।