এম শরীফ ভূঞা, ফেনী :
কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ফেনীর মুহুরী নদীর ফুলগাজী ও পরশুরামের তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে। বাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার গ্রামীণ সড়ক, কৃষি ও মৎস্যখাত। এতে প্লাবিত হয়েছে কমপক্ষে ২০টি গ্রাম।
পরশুরাম পয়েন্টে মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) নদীর পানি বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও বাঁধের অংশ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত আছে। এতে নতুন নতুন এলাকায় প্লাবিত হচ্ছে।
জানা গেছে, পরশুরাম-ফুলগাজী-ছাগলনাইয়া উপজেলা নিয়ে ফেনী-১ সংসদীয় এলাকা গঠিত। প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষের বাস এ জনপদে। প্রতিবেশী ভারত থেকে উৎস মুহুরী নদী প্রবাহিত হয়েছে এ তিন উপজেলার বুক চিরে। বর্ষায় চির যৌবনা এ নদীর করাল গ্রাসে বানভাসি মানুষের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সর্বনাশা বন্যায় সৃষ্ট নদীর ভাঙনে অবহেলিত এ জনপদের মানুষের ধান পানিতে তলিয়ে যায়। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণীকুলসহ কয়েকশ মৎস্য ঘের বন্যার পানিতে ডুবে অসীম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয় এসব এলাকার মানুষরা।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ফুলগাজীতে ৩০০ হেক্টর ও পরশুরামে ১৬৫ হেক্টর রোপা আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া তলিয়ে গেছে সবজি ক্ষেত। জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বন্যার পানিতে দুই উপজেলার ৩৭৫ পুকুর ও ঘেরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ক্ষতির চূড়ান্ত পরিমাণ নির্ণয় ও ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সহযোগিতা করতে মাঠপর্যায়ে মৎস্য বিভাগ সচেষ্ট রয়েছে।
ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল আলিম মজুমদার বলেন, প্রতিবছর বন্যায় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়। এ এলাকার মানুষ স্থায়ী সমাধানের জন্য নদী খনন ও টেকসই বাঁধ নির্মাণ চায়।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে আমরা আছি। প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে। প্রস্তুত রয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো।
বৃষ্টি ও নদীর পানি বাড়ার ফলে জেলার সীমান্তবর্তী এ দুই উপজেলায় নদীর ভাঙন দেখা দিলে মানুষের দুর্ভোগ লাগামহীন হয় প্রতিবছর। টেকসই বাঁধ মেরামতের জন্য ৭৩১ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু হবে নিরীক্ষণ শেষে। নদীতে পানির প্রবাহ কিছুটা কমে এলে ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত করা হবে বলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো.আরিফুর রহমান ভূঁইয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
নদীর উভয়পাড়ের ১২২ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের তীরবর্তী এলাকার কয়েকশ পরিবারের হাজার হাজার মানুষের মানবেতর দিন কাটছে।
এমন দুর্দশার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফেলতিকে দায়ী করে স্থানীয় এনামুল হক বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচ প্রকল্পের পাইপ বাঁধের নিচ দিয়ে নেওয়ার সময় ভালো করে মাটি চাপ দেওয়া হয়নি। বাঁধ সংলগ্ন স্থানে বালু উত্তোলন, বড় ইঁদুরের গর্ত তৈরির কারণে বাঁধ ভেঙে যায়।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, মাটির বাঁধ এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। এরপর ইঁদুরসহ বিভিন্ন প্রাণী ফুটো করে ফেলে। আর ওই ফুটো পানির চাপে ভাঙন কবলিত হয়। এছাড়া নদীর ধারণ ক্ষমতাও কম। নদীর কয়েকটি স্থানে আছে ৯০ ডিগ্রির মতো বাঁক। নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে টেকসই বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা প্রক্রিয়াধীন।
তবে এমন আশ্বাসে স্বস্তি নেই এলাকাবাসীর। প্রতি বছর বর্ষা এলে বাঁধ ভাঙে, শুনতে হয় নতুন আশ্বাস। একদিকে বাঁধ সংস্কার করা হয় অন্য দিকে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকায় সমস্যা আরো প্রকট হচ্ছে। স্থানীয়রা ত্রান চান না, তারা স্থায়ী সমাধান চান।