Home » মাদ্রাসা ছাত্রী ইসরাত জাহান জেরিন কে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদে মানববন্ধন

মাদ্রাসা ছাত্রী ইসরাত জাহান জেরিন কে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদে মানববন্ধন

by আজকের সময়

আবদুর রহমান জাহাঙ্গীর, কবিরহাট :

মাদরাসা পড়ুয়া মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও উত্ত্যক্তর প্রতিবাদ করায় ধানশালিক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও  তার পুত্র মোহাম্মদ জিহাদ এর উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে নোয়াখালীতে মানববন্ধন পালিত হয়েছে।
বুধবার (৭ই জুন) সকালে কবিরহাট উপজেলার ধানশালিক বাজারে এই মানববন্ধন পালিত হয়। মানববন্ধনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দ, এলাকাবাসী, বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী সহ প্রায় ২সহস্রাধিক মানুষ অংশগ্রহন করে।
অপরদিকে গত ইউপি নির্বাচনে ধানশলিক ইউনিয়নে নৌকার পক্ষে কাজ করার জেরধরে ৪৭ বছর বয়সী আওয়ামীলীগ নেতাকে ইভটিজার বানিয়ে মামলা দিয়ে হইরানির অভিযোগ উঠেছে ধানশালিক ইউনিয়নের স্বতন্ত্র ভোট করে নির্বাচিত চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে।
মানববন্ধনে ধানশালিক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন বলেন, আমার মেয়ে চাপরাশিরহাট এ রব সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় নবম শ্রেণিতে পড়ে। মাদরাসায় আসা-যাওয়ার পথে স্থানীয় সন্ত্রাসী আতিক উল্লাহর নেতৃত্বে বখাটে আকাশ একরাম, দিপু সহ কয়েকজন আমার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করতো। আতিক উল্লাহ ফারুক শালিশ বানিজ্যের সাথে জড়িত, এনিয়ে তার সাথে আমার কথা-কাটাকাটি হয়,তার জের ধরে আতিক উল্লাহ ফারুক এর নেতৃত্বে একদল বখাটেপনা কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা আমার মেয়ে জেরিন কে নানাভাবে যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন কুপ্রস্তাব দেয়। বিষয়টি আমার মেয়ে জেরিন আমার ছেলে জিহাদ কে জানালে আমার ছেলে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসা করতে যায়। এ সময় বখাটেরা আমার ছেলেকে বেধড়ক মারধর করে। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই এবং চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন টিটু ও চাপরাশিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হানিফ বিএসসি বিএড কে জানালে তারা ও আসেন। পরে টিটু চেয়ারম্যান ও হানিফ বিএসসি বিএড এর সামনে বখাটেরা কয়েকজন মিলে আমাদের ওপর লাঠিসোটা ও লোহার রড নিয়ে হামলা চালায়। আমার ছেলেকে রড দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে এবং আমি লাঞ্ছিত হই। হামলায় আমার ছেলে আবু বক্কর ছিদ্দিক জিহাদ গুরুতর আহত হয়। এ বিষয়ে কবিরহাট থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এবং এ পর্যন্ত তিনজন কে গ্রেফতার ও করা হয়েছে, কিন্তু প্রধান আসামী আতিক উল্লাহ ফারুক কে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। সে প্রকাশ্য দিবালোকে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আতিক উল্যাহ ফারুক বলেন, আমি গত ইউপি নির্বাচনে ধানালিক ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকের চেয়ারম্যান ইয়াকুব নবীর পক্ষে কাজ করি। সেই নির্বাচনে স্বতন্ত্র ভোট করেছে বর্তমান চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন। নির্বাচনের পর থেকে সে আমাকে বিভিন্ন ভাবে হইরানি করে আসছে। আমার একটি মেয়ে বিয়ে দিয়েছি। আমি ৪৭ বছর বয়সে তার ১৪ বছরের মেয়েকে ইভটিজিং করব আপনাদের মনে হয় কিভাবে? আপনারা এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানেন যে আমার বিরুদ্ধে এহেন কোন অভিযোগ আছে কিনা। ঘটনার দিন চেয়ারম্যানের ছেলের নেতৃত্বে কয়েকজন কিশোর গ্যাং এর ছেলেরা এসে আমার এলাকার দিপু নামের এক ছেলেকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে। পরে এলাকার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে আটক করলে খবর পেয়ে সেখানে আসেন ধানশালিকের চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন। তিনি ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করে উল্টো উস্কানিমূলক আচারণ করায় তাদেরকে অবরুদ্ধ করেন এলাকাবাসি। আমি খবর পেয়ে রাত নয়টায় চাপরাশিরহাট বাজার থেকে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনি এটাই আমার অপরাধ।
মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্রীকে ইভটিজিং করার বিষয়ে কি পদক্ষেপ নিয়েছেন মাদ্রাসার পক্ষ থেকে জানতে চাইলে চাপরাশিরহাট এ রব ফাজিল মাদ্রাসার পিন্সিপাল মাওলানা এ.টি.এম ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, আমার মাদ্রাসার ছাত্রীকে ইভটিজিং করেছে আমি নিজেই জানিনা। এবিষয়ে কোন অভিবাবক আমাকে অবগত করেনি। আমার কাছে জানালে আমি বিষয়টি আইনিভাবে মোকাবিলা করতাম। অপর এক প্রশ্নের জবাবে এ পিন্সিপাল জানান, তারা মানববন্ধন কিংবা প্রতিবাদ সভা করতেছে সেই বিষয়ও আমি কিংবা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জানিনা। ইভটিজিংয়ের শিকার হয়েছেন আমার মাদ্রার ছাত্রী অথচ আমাকে কিছু না জানিয়ে তারা নিজেদের ক্ষমতামতে সব কিছু করতেছে। মানববন্ধনে অংশগ্রহন করা ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে মাদ্রসার ছাত্র-ছাত্রী আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, সেখানে আমাদের মাদ্রসার কেউ ছিলনা।
অন্যদিকে মানববন্ধন কর্মসূচিতে সাহাব উদ্দিন বলেন তিনি মাদরাসা কর্তৃপক্ষের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছিলেন। এবং আজকের মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছেন কিন্তু তারা উপস্থিত হয়নি।
এ-সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং অরাজনৈতিক ও সামজিক নেতৃবৃন্দ ইভটিজার এর প্রধান আসামী, বখাটেদের সাঙ্গপাঙ্গরা সহ অভিযুক্ত আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবী জানান।
এঘটনায় উভয় পক্ষই স্থানীয় সংসদ সদস্য সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের হস্তক্ষেপ ও প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার দাবী করেন।

আরো খবর