এম শরীফ ভূঞা :
বহু প্রতীক্ষিত ও বহু আকাঙ্ক্ষিত এক সফরের সূচনা। আল্লাহর অশেষ রহমতে ২০২৪ সালের নভেম্বরে সৌদি এয়ারলাইন্সে ঢাকা থেকে পবিত্র মদিনা শরীফের উদ্দেশ্যে রওনা হই। হজ্জ ও ওমরাহর উদ্দেশ্যে জীবনের প্রথম এই সফর ছিল আত্মা ছুঁয়ে যাওয়া অভিজ্ঞতায় ভরপুর।
মদিনায় ৬ দিন অবস্থান করি আর মক্কায় ০৮ দিন। মসজিদে নববীতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও জুমআ আদায় করি—প্রতিটি রাকাত যেন হৃদয়ের ভেতরে প্রশান্তির স্রোত বইয়ে দেয়। রওজা মোবারক জিয়ারতের সময় অন্তর কেঁদে উঠে। জান্নাতুল বাকি, জ্বীনের পাহাড়, ক্বুবা মসজিদসহ ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর সফর আমাকে প্রিয় নবীজির (সা.) জীবন ও সাহাবিদের ত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। শান্ত মদিনা শহর আর প্রবাসী ভাইদের আন্তরিকতা হৃদয়গ্রাহী ছিল।
শুক্রবার জুমআ নামাজ শেষে মিকাত থেকে এহরাম পরে সড়কপথে মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। হারাম শরীফে পৌঁছে প্রথমবার কাবা শরীফ দর্শনে মন ভরে আসে। ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখর। মোয়াল্লেমের সহায়তায় তাওয়াফ, সাঈ করে প্রথম ওমরাহ সম্পন্ন করি।
পরবর্তী দিনগুলোতে মরহুম পিতা, মাতা, শ্বশুর-শাশুড়ি এবং সন্তানদের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে ওমরাহ আদায় করি। প্রতিটি ওমরাহ ছিল ভিন্ন এক আত্মিক অনুভব। জেদ্দা শহর, আয়েশা মসজিদ, তায়েফ শহর, লোহিত সাগরের তীর ও ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সফর করি। কাবা শরীফের পাশে অবস্থান যেন জান্নাতের সন্নিকট।
সকলের সহযোগিতাপূর্ণ সফর কিভাবে কেটে গেলো টের পায়নি। এর মাঝে আমাদের আসার খবর পেয়ে নাজরান শহর থেকে মক্কায় বিমানে উড়ে আসেন বিজয়পুর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান একরামুল হক। উনার সাথে কয়েকবার ওমরাহ পালনের সৌভাগ্য হয়েছে। দেশে ফেরার দুইদিন আগে দেখা করতে আসেন জেদ্দা কনস্যুলেট জেনারেল অফিসের কর্মকর্তা জালাল আহমেদ। ছুটির দিনে জেদ্দা শহর ও সী বিচ ঘুরে দেখান। সন্ধ্যার পর আল বাইকে খাবার শেষে হোটেলে নিজস্ব রুমে ফিরে আসি। প্রবাসী ভাই ফারহানুল হক নিশান অফিসের কাজে জর্ডান থাকায় মদিনায় দেখা না হওয়ায় তিনদিন পর মক্কায় দেখা করতে ছুটে আসেন। স্বল্প সময়ে ভালো লাগার মুহুর্ত ছিলো। মদিনায় এফ টিভি ব্যুরো চীফ দেলোয়ার হোসেন সুমন ভাই, আলমগীর হোসেন ভাই সহ অসংখ্য প্রিয় মানুষের আপ্যায়ন ভুলার মত নয়। অনেকে দেখা করার ইচ্ছে থাকলে সময় সুযোগের কারনে সম্ভব না হওয়ায় খোঁজ খবর নিয়েছেন।
দেশে ফেরার দুই সপ্তাহ পর আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার পুত্র এম শেহজাদ ভূঞা জন্ম নেয়। একমাত্র কন্যা সাদিকা সুবহা বাবাকে কাছে পেয়ে পরিপূর্ণ হয়।
এই সফর শুধু একটি ভ্রমণ নয়, বরং জীবন বদলে দেওয়া এক অনন্য অভিজ্ঞতা। আল্লাহ যেন সকল মুসলমানকে হজ্জ ও ওমরাহ পালনের সৌভাগ্য দান করেন—আমিন।
লেখক, সাধারণ সম্পাদক, ফেনী সাংবাদিক ইউনিটি।