সংবাদদাতা :
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ফেনী জেলা শাখার উদ্যোগে এক ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। শনিবার (৮ জুলাই) বিকেলে ক্রাউন ইষ্ট রেষ্টুরেন্টের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ঈদ পুনর্মিলনীতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমীর রেজাউল করিম জালালী।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ফেনী জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ঈদ পুনর্মিলনীতে প্রধান আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মুসা, কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা হারুনুর রশীদ ভূঁইয়া ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু সাঈদ নোমান। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ফেনী জেলা সেক্রেটারি আবু বক্কর ছিদ্দিক এর সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিলেট জেলা সহ-সভাপতি মাওলানা জাহিদ উদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতা মাওলানা রিদওয়ানুল্লাহ ইউছুফী, মাওলানা আশ্রাফ আলী, মাওলানা নিজাম ওবায়দী, মুফতি মামুনুর রশীদ, মাওলানা আবুল কাসেম ও মাওলানা কারিমুল হক মামুন প্রমুখ। এসময় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর বলেন- কারাবন্দী বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকসহ সকল আলেম ওলামাদের মুক্তির দাবি জানিয়ে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠায় সকল ইসলামি দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে গ্রহণ যোগ্য নির্বাচন দেয়া গণদাবীতে পরিণত হয়েছে। তাই বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করে অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার দাবি করেন।
প্রতিবেদন
স্টাফ রিপোর্টার :
খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খন্দকার ইখতিয়ার উদ্দিন মো.আরাফাতের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রীট করে ওই কর্মকর্তার রোষানলে পড়েছেন দুই দিনমজুর।
গত রোববার (১৩ নভেম্বর) মো. আবুল কালাম নামে এক দিনমজুরকে রামগড় বাজার থেকে রাজনৈতিক ক্যাডার দিয়ে তুলে নিয়ে উপজেলা পরিষদে নিয়ে আসা হয়। পরে ইউএনও অফিস কক্ষে তাঁকে নিয়ে সাদা কাগজে কয়েকটি স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দেন। এ সময় তাঁকে প্রায় দুই ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। আরেক দিনমজুর মো. আমিনকে কয়েকজন অপরিচিত লোক খোঁজাখুজি করছে বলে তিনি জানান। ওই অবস্থায় দুজনেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রোববার রাতে এই বিষয়ে ভুক্তভোগী দু’জন রামগড় থানায় জিডি করতে গেলে তাঁদের জিডি গ্রহন না করে ফিরিয়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ উঠে। অবশ্য থানার পরিদর্শক(তদন্ত) রাজীব রায় বলেছেন, বিষয়টি আমার জানা নাই।
শেষমেষ ভুক্তভোগী দিনমজুরের রোববার রাতে বিজিবি ৪৩ ব্যাটালিয়ন জোনে নিরাপত্তা চেয়ে একটি আবেদন করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে রামগড় ইউএনও খন্দকার ইখতিয়ার উদ্দিন মো.আরাফাতের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহা সচিব এড. আহসান হাবীব বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা সরেজমিন গিয়েছি আমরা কাজ করছি। ইউএনও সাহেব অন্যায় ভাবে তাঁদের জেলে পাঠিয়েছেন, তাঁরা প্রতিকার চেয়ে মহামান্য হাইকোটে রীট পিটিশন করেছেন। এ অবস্থায় ইউএনও সাহেব তাঁদের জোর করে স্বাক্ষর নিতে পারেন না। বিচারাধীন বিষয়টি তারাও আরও একবার অন্যায় করেছেন।
এর আগে রামগড় বিজিবি বিওপি সংলগ্ন ক্যাম্পে কাজ করতে গেলে রামগড় ইউএনও মোবাইল কোর্ট করে ৫ দিনের সাজা দেন দিনমজুর মো. আবুল কালাম ও মো. আমিনকে। বিষয়টি নিয়ে সংক্ষুদ্ধ হয়ে দুই দিনমজুর সরকারের কাছে ক্ষতিপুরন চেয়ে এবং রামগড় ইউএনও খন্দকার ইখতিয়ার উদ্দিন মো.আরাফাতের বিচারকি ক্ষমতা বাতিল চেয়ে গতমাসে হাইকোর্টে একটি রীট পিটিশন দায়ের করেন।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস আজকের সময়কে বলেন, রামগড় ইউএনও বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রীট পিটিশনের কথা জানা নাই। তবে আমার কোন অফিসার ক্যাডার দিয়ে কাউকে অফিসে ডেকে আনে স্বাক্ষর নিতে পারেননা।
এম শরীফ ভূঞা, আজকের সময় :
বর্ষা এলেই আতঙ্কে দিন কাটে ফেনীর উত্তরের মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয় নদীপারের মানুষের। ভারতের উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল প্রতি বছরেই নিঃস্ব করে দিয়ে যায় তাদের। ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি, মাছের পুকুর সব ভেসে যায় বানের জলে। দুর্ভোগের এমন চিত্র প্রতি বছরের।
অথচ কেবলমাত্র ২০২১ সালে ভাঙনকবলিত স্থান মেরামতে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এভাবে প্রতিবছর ভাঙছে আর মেরামত হচ্ছে ১২২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বা মুহুরী বাঁধ। চিহ্নিত হয়েছে বাঁধের ২১ ঝুঁকিপূর্ণ স্থান। এমন তথ্য বিভিন্ন সময় জানান উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আকতার হোসেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের বন্যায় ২২ জায়গায় বাঁধ ভেঙে যায়। তখন বাঁধ মেরামতে প্রায় ২শ’৪৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়। ২০১৯ সালের বন্যায় ১৫ জায়গায় বাঁধ ভেঙে যায়। সেসময় মেরামতে প্রায় ১শ’ ৭৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়। ২০২০ সালের জুলাই মাসেও বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে যায়। তখন দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ৭শ মিটার বাঁধ মেরামত করা হয়।
অপরদিকে বানভাসি মানুষের হাহাকার চলছে বহুকাল ধরে। বাঁধভাঙা মানুষের স্বপ্নগুলোও একইভাবে ভাঙে। ভেসে যায় উজান হতে ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আবাদ, মাছের ঘের, নষ্ট হয় গৃহস্থালি পণ্য।
বর্ষায় ভারত হতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মানুষের ক্ষতিরোধে ২০০৪-০৫ অর্থবছরে নির্মাণ কাজ শুরু হয় মুহুরী বাঁধের।
উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আকতার হোসেন জানান, ১৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হয় ২০১১ সালে। পরশুরামের নিজকালিকাপুর হতে বাঁধটি শুরু হয়। মুহুরী নদীর পশ্চিম পাড়ে বাঁধটি রেজুমিয়া ব্রিজ পর্যন্ত তৈরি হয়। কহুয়া নদীর দুইপাড়ে ৩৪ কিলোমিটার, সিলোনিয়া নদীর পূর্বপাড়ে প্রায় ৩০ কি.মি. বাঁধ নির্মিত হয় ফুলগাজী উপজেলার বন্দুয়া ব্রিজ পর্যন্ত।
স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ (পাউবো) ও ঠিকাদারদের ব্যাপারে। একাধিক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি জানান, বাঁধ নির্মাণ সঠিক হয়নি। ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতে ঠিকাদারের যথাযথ তদারকি করেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জানান, বাঁধ নির্মাণের পর তা পরিচর্যার জন্য বরাদ্দ পাওয়া যায় না। বেড়িবাঁধ নিয়মিত সংস্কার করা যায়নি বরাদ্দের অভাবে। ২০২০-২১ অর্থবছরে অনুন্নয়ন খাতে ১২২ কি.মি. বাঁধ সংস্কারে কোনো অর্থ বরাদ্দ আসেনি। বরাদ্দ এসেছে শুধু ভেঙে পড়া বাঁধ মেরামতে।
মুহুরী বাঁধ যথাযথ নকশা অনুযায়ী তৈরি হয়নি বলে বিশ্লেষকদের অভিযোগ রয়েছে। নদীর গভীরতা, প্রয়োজনীয় সেট ব্যাক না রেখেই তৈরি হয়েছে এটি। ফলে বারবার ভাঙনের কবলে পড়ছে উপচেপড়া পানির স্রোতে।
চলতি বছরের ৭ এপ্রিল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের স্থায়ী সমাধানে ৭৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন। শর্তগুলো প্রতিপালন সাপেক্ষে প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আক্তার হোসেন মজুমদার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সহসা টেকসই বাঁধ নির্মাণে স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় যেসব শর্ত পূরণ করে প্রকল্পটি পাঠাতে বলেছে তা সম্পন্ন করতে দীর্ঘ সময় লাগবে। যে কারণে প্রকল্পটি সহসা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া যাবে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, সোমবার (২০ জুন) সন্ধ্যা ৬টার দিকে মুহুরী-কহুয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ৭১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। প্রতিবারই বাঁধ ভাঙলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের আশ্বাস এবার মানতে নারাজ উত্তরাঞ্চলবাসী। প্রতিবছর বাঁধ ভেঙে বন্যার এ দুর্গতি থেকে মুক্তি চান তারা।