এম শরীফ ভূঞা, ফেনী :
কিছুদিন এখানেতো আর কিছুদিন অন্যখানে। থাকার জন্য নিজেদের একটু ভূমি আর ঘর ছিলো না। ৪০ বছর ধরে ভাসমান জীবন। অবশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহার জমিসহ একটি ঘর পেয়ে তাদের ৪০ বছরে দুঃখ ঘুচল। সন্তানদের নিয়ে মরিয়ম আজ সেই ঘরে উঠেছেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় ধাপে ছাগলনাইয়ায় ৩৮ জন গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে ঘর প্রদান করা হচ্ছে। বিবি মরিয়ম ছাগলনাইয়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড মটুয়া নতুন পাড়ায় স্থাপিত আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটি ঘর পেয়েছেন।
পান খেয়ে ঠোঁট লাল, সেই ঠোঁটের কোনে প্রাণখোলা উচ্ছ¡াস। যেনো রাজ্যের সব হাসি ভিড় করেছে মরিয়মের মুখে। এমন হাসি খুব কম দেখা মেলে। ষাটোর্ধ্ব মরিয়মের এ হাসির কারণ দীর্ঘ ৪০ বছর পর ভূমিহীন থেকে ভূমির মালিক হওয়া ও নিজের ঘরে পা রাখার। অধরা স্বপ্ন বাস্তব হওয়ার।
মরিয়মদের স্থায়ী নিবাস ছিলো বরিশালের কলাপড়া থানাধীন রহমতপুর গ্রামে। চল্লিশ বছর আগে নদী ভাঙ্গনে তাদের ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলীন হলে স্বামী-সন্তান নিয়ে চলে আসেন ফেনীর ছাগলনাইয়ায়।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য ঘর পেয়ে চার দশকের কষ্ট ভুলে আনন্দিত ছাগলনাইয়ার বিবি মরিয়ম ও তার পরিবার। তার স্বামী ফজলুল হক হাওলাদার, দুই ছেলে ও দুই কন্যা সন্তানকে নিয়ে ছাগলনাইয়ায় এসে মির্জার বাজার এলাকায় আশ্রয় নেয় অসহায় পরিবারটি।
সেখানে একটি রাইস মিলে বিবি মরিয়ম ও তার স্বামী দুইজনে কাজ শুরু করেন। রাইস মিলের পাশে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে চলতে থাকে তাদের সাংসারিক জীবন। সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে বড় হয়ে উঠে তাদের চার ছেলে মেয়ে। চার সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে প্রতিবন্ধী। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর দুই কন্যাকে বরিশালের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেন এবং দুই ছেলেকেও বিয়ে করান মরিয়ম দম্পত্তি।
মরিয়ম ও তার স্বামী দীর্ঘ বছর যাবত রাইস মিলে শ্রম দিয়ে সংসার খরচ জোগাড় করলেও হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় সেই রাইস মিলটি। এরপর স্বামী ফজলুল হক হাওলাদার এদিক ওদিক ফেরি করে পান-সিগারেট বিক্রির কাজে লেগে যান। মরিয়মের বড় ছেলে প্রতিবন্ধী হওয়ায় কোন কাজ করতে অক্ষম হলেও ছোট ছেলে এনায়েত ভটভটি চালানোর কাজে নিয়োজিত হয়। অভাবের সংসারে কিছুটা আলো দেখতে শুরু করেন তারা।
চল্লিশ বছর আগে নদী ভাঙ্গনের কবলে নদীগর্ভে ভিটেমাটি বিলীন হয়ে যাওয়ায় বিবি মরিয়ম দম্পতি সুদূর ছাগলনাইয়ায় এসে নতুন জীবন গড়ার স্বপ্ন বুকে লালন করে কর্মযজ্ঞ চালাতে থাকলেও নিজস্ব একটি আশ্রয়ের স্বপ্ন ছিল তার বহুদিনের।
প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে একটি পাকা ঘরবাড়ি পেয়ে জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে বলে জানান বিবি মরিয়ম। তিনি বলেন, এ উপহার তার জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়ে মনের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বিবি মরিয়ম এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আমার অধরা স্বপ্নকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবতায় রূপ দিয়েছেন। তিনি বলেন, চল্লিশ বছর অন্যের ঘর ভাড়া নিয়ে স্বামী সন্তান নিয়ে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করেছি এখন নিজের ঘরে বসবাস করতে পেরে আমি ও আমার পরিবার অত্যন্ত খুশী।
৪০ বছরের দুঃখ ঘুচল ফেনীর মরিয়মের
১৪২