Home » সোনাগাজীতে শয্যা সংকটে রোগীদের ভোগান্তি

সোনাগাজীতে শয্যা সংকটে রোগীদের ভোগান্তি

by আজকের সময়

সোনাগাজী প্রতিনিধি :

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুটি ভবন ছিল। একটি ৩১ শয্যা ও অন্যটি ১৯ শয্যাবিশিষ্ট। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়। এরপর থেকে হাসপাতালে ভর্তি ও আগত রোগীদের জন্য শয্যার সংকট সৃষ্টি হয়।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৯ কোটি ৬৭ লাখ ৯৯ হাজার ৫২৫ টাকা ব্যয়ে তিনতলা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মাণে মনি অ্যান্ড জেএইচএন জেবি এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গত বছরের ২৭ জুন ভবন নির্মাণের জন্য তাদের ১১ মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার এক বছর পর চলতি মাসের গত সপ্তাহ থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করে।

টিনশেডের ঘরে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে জরুরি বিভাগে আসা রোগীদের। বারান্দা, সিঁড়ি ও মেঝেতে চাদর বিছিয়ে শুয়ে আছেন রোগীরা। হাসপাতালের ১৯ শয্যায় ভর্তি রয়েছেন ৮৫ জন রোগী। এর মধ্যে ৪২টি শিশু রয়েছে। মাত্র ১৯টি শয্যা নিয়ে এভাবেই চলছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

পুরনো ভবন ভেঙে ফেলার পর অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল দিতে ১৯ শয্যা ভবনের ছাদে একটি ২০ শয্যার শেড নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শেড নির্মাণ না করায় রোগীদেরকে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে।

১৯৬৫ সালে সোনাগাজী পৌরশহরের জিরো পয়েন্টে একটি পল্লী চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। ১৯৭৭ সালে সেটিকে ৩১ শয্যার থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রূপান্তর করা হয়। ২০০৭ সালে ১৯ শয্যার একটি নতুন তিনতলা ভবনের কাজ শুরু হয়। ২০১২ সালে কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নতুন ভবন কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিলেও এখনো তা উদ্বোধন করা হয়নি। তারপরও দুটি ভবন মিলে ৫০ শয্যায় রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় পুরোনো ভবনটি অপসারণ করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৯ শয্যার ভবনে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম।

এছাড়া উপজেলার মঙ্গলকান্দি ২০ শয্যা হাসপাতালটি ২০১৪ সালে নির্মাণ শেষে কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিলেও এখনও পর্যন্ত ওই হাসপাতালে চিকিৎসক-কর্মচারীসহ জনবলের পদই সৃষ্টি হয়নি। এতে করে ওই হাসপাতালটিতে শুধুমাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে প্রাথমিক সেবা চালু রয়েছে।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, এক কক্ষে দুই-তিনজন করে বসে রোগী দেখছেন চিকিৎসকরা। নার্সরাও বারান্দায় ও মেঝেতে বসে সেবা দিচ্ছেন। ডেলিভারি ওয়ার্ডেও থাকতে দেওয়া হয়েছে অনেক রোগীকে। এতে করে জরুরি মুহূর্তে রোগীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। শয্যা না থাকায় রোগীদেরকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্সিং সুপারভাইজার রেজিয়া বেগম বলেন, প্রতিদিন উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। জায়গা না পেয়ে দূর থেকে আসা অনেক রোগীকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে জেলা সদর হাসপাতালে। এছাড়া রোগীর অতিরিক্ত চাপের কারণে গণশৌচাগারের সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন শয্যার চেয়ে অনেক বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। নতুন ভবনে শয্যার সংখ্যা বাড়ালে রোগীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবেন।

উপজেলার চর খোয়াজ এলাকার ফাতেমা আক্তার বলেন, রাত থেকে তার ডায়রিয়া শুরু হয়। গতকাল সকালে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। কোনো শয্যা খালি না থাকায় মেঝেতে রেখে তাকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মো. আবদুল্লাহ নামে এক শিশুর মা বলেন, তার ছেলেকে জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। শয্যা খালি না থাকায় দোতলার সিঁড়ির ওপর রাখা শয্যায় থাকতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উৎপল দাশ বলেন, হাসপাতালটি ৫০ শয্যার কথা বলা হলেও এখনও পর্যন্ত ৩১ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে। এখানে চিকিৎসক-নার্সসহ সব ধরনের জনবলের সংকট রয়েছে। শয্যা ও কক্ষ সংকটে চিকিৎসা সেবার সঙ্গে দাপ্তরিক কার্যক্রমেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন পর নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হলেও কাজের কোনো গতি দেখা যাচ্ছে না।

আরো খবর