এম শরীফ ভূঞা, আজকের সময় :
কোরবানির বাজার ধরতে প্রস্তুত নতুন কিছু ফেনীর বিভিন্ন উপজেলার উদ্যোক্তা ও খামারিরা। এ অঞ্চলের খামারিরা বলছেন, এবার যদি ভারত থেকে পশু না আসে, তাহলে লাভবান হবেন তারা।
ফেনীর ১০২ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকার মধ্যে দুই স্থানে ৫৭৯ ও ৩৩৪ মিটার সীমানা অরক্ষিত। তবে ভারত থেকে যাতে দেশের অভ্যন্তরে অবৈধভাবে গরু প্রবেশ বন্ধ থাকে, সে ব্যাপারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তৎপর রয়েছে বলে জানা গেছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দাবি, অভ্যন্তরীণভাবেই ফেনীতে কোরবানি পশুর শতভাগ চাহিদা মেটান যাবে। অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৭৫ হাজার। আর এজন্য লালন-পালন করা হচ্ছে ৮১ হাজার ৯৮০টি পশু। এর মধ্যে ২৬ হাজার ১৭৪টি ষাঁড়, ৩২ হাজার ৭৬৩টি বলদ, ৮ হাজার ৩১০টি গাভী, ৩ হাজার ২৩০টি মহিষ, ১০ হাজার ৮৮৩টি ছাগল ও ৫৭৮টি ভেড়া।
চৌধুরী মুকুল বাবু নামে ফুলগাজীর এক উদ্যোক্তা বলেন, এবার প্রথমবারের মতো অল্পকিছু গরু নিয়ে খামার দিয়েছি। ঈদকে কেন্দ্র করে খাদ্য, ওষুধ ও শ্রমিকসহ অনেক টাকা পুঁজি খাটিয়েছি। বাজারে ভারত থেকে যদি গরু না আসে আশা করি ক্ষতির সম্মুখীন হবো না।
গো খাদ্যদ্রব্যসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ার পশু বিক্রয় করে লাভ নিয়েও শঙ্কা রয়েছে খামারিদের মধ্যে। এ প্রসঙ্গে আমান অ্যাগ্রো কমপ্লেক্সের সত্ত¡াধিকারী নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, খামারের যাবতীয় খরচের যে ঊর্ধ্বগতি তাতে পুঁজি উঠবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। প্রতি কেজি খাদ্যে প্রায় ৩০ টাকার মতো বাড়তি গুণতে হচ্ছে। ঈদুল আযহায় এবার বিক্রয়ের জন্য তাদের ৮৫টি গরু প্রস্তুত রয়েছে বলে জানা গেছে।
লাভের আশা থাকলেও আছে লসের শঙ্কাও। জানা গেছে, গো-খাদ্যের উচ্চ মূল্যের কারণে কিছুটা চিন্তা রয়েছে খামারিদের মনেও। অ্যামিটি অ্যাগ্রো এর পরিচালক সাইমুন মুসা বলেন, গত ২ মাস ধরে আগের দামের চেয়ে বাড়তি দামে খাদ্য কিনতে হচ্ছে। সে তুলনায় গরুর দাম না পেলে বড় লোকসান গুণতে হবে।
ফুলগাজী সূচনা অ্যাগ্রো ফার্মের সত্ত¡াধিকারী জাহিদুল ইসলাম ফয়সাল বলেন, গরুর খাদ্যদ্রব্যসহ অন্যান্য সামগ্রীর দাম তুলনামূলক অনেক বেশি। তারপরও স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকলে অন্তত লোকসান গুণতে হবে না। ক্রেতা চাইলে খামারে এসে গরু কিনতে পারবেন। প্রয়োজনে এখন পছন্দ করে ঈদের আগে দাম পরিশোধ করেও নিতে পারবে বলেও তিনি জানান।
পরশুরাম উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ঈসমাইল হোসেন বলেন, উপজেলায় ৫ হাজার গরুর চাহিদা থাকলেও অতিরিক্ত যোগান আছে। ছাগলের চাহিদা হাজারের মতো থাকলেও বিপরীতে প্রায় পাঁচ শতাধিকের মতো সঙ্কটও রয়েছে।
উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে পশুর খাবার পরিবেশন পদ্ধতি, টিকাদান ও বিভিন্ন রোগবালাই সম্পর্কিত বিষয়ে প্রায় আড়াইশ লোককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান। প্রতিমাসে মাঠ পর্যায়ে ৭ থেকে ৮টি উঠান বৈঠক হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন ঈসমাইল।
ফেনী-৪ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ কে এম আরিফুল ইসলাম বলেন, সীমান্তে নিয়মিত টহলের সাথে বাড়তি নজরদারি করা হচ্ছে। অবৈধভাবে গরু প্রবেশ বন্ধে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বিএসএফের সাথে কথা হয়েছে। তাদেরকে এ বিষয়ে কঠোর হতে বলা হয়েছে।
নিরাপদ মাংস উৎপাদনে গবাদি পশু হৃষ্ট পুষ্টকরণ করতে খামারিদের নিয়মিত সহায়তা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আনিসুর রহমান। তিনি আরও বলেন, মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন রোগের টিকা, খামারি প্রশিক্ষণ, কারিগরি সহযোগিতা, কেমিক্যাল, হরমোন ও স্টেরয়েড সংক্রান্ত জনসচেতনতা তৈরি করতে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া দফতরের কর্মকর্তারা নিয়মিত মাঠ পর্যায়ে খোঁজখবর রাখছেন।
জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আনিসুর রহমান বলেন, প্রায় ৬ হাজার ৯৩৮টি পশু চাহিদার অতিরিক্ত রয়েছে। এছাড়া অনেকে ব্যক্তিগতভাবে এক বা একাধিক পশু লালন-পালন করছেন। বাজারের সব পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে তালিকাভুক্ত ৪ হাজার ৯২৬ জন খামারি আশপাশের জেলাগুলোয় পশু পাঠাতে পারবেন।
সীমান্ত দিয়ে গরু আসলে লোকসানের শংকা ফেনীর উদ্যোক্তাদের
১৪১