এম শরীফ ভূঞা, ফেনী :
ঝামেলাহীনভাবে কোরবানির পশু কিনছেন ক্রেতারা, তাও আবার ডিজিটাল পদ্ধতিতে। ‘লাইভ ওয়েট মেশিনের’ মাধ্যমে চলছে ফেনীতে পশু বেচাকেনা। ক্রেতাদের আগ্রহ থাকায় প্রাণী সম্পদ বিভাগও উৎসাহ যোগাচ্ছে এ পদ্ধতিতে।
জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবারের মৌসুম ঘিরে অনেকেই পশু মোটাতাজাকরণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। জেলায় এ বছর খামার পর্যায়ে ৮৮ হাজার পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত। প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে রয়েছে আরও ২৫-৩০ হাজার পশু। এসবের ওপর ভিত্তি করে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আনিসুর রহমান বলেন, এবারের কোরবানির ঈদে ফেনীতে ৮০ হাজার ৮০০ পশুর চাহিদা আছে। তবে জেলার বিভিন্ন খামারি ও প্রান্তিক পশু পালনকারীদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যে ১ লাখের বেশি পশুর যোগান আছে বলে জানা যায়। অনেকে নিজেরা লালন পালন করে কোরবানি করেন। সে হিসেবে ১ লাখ ২ হাজার পশু কোরবানি হবে।
কয়েকটি খামারে গিয়ে দেখা গেছে, কোরবানির পশুর (গরু) গলায় ট্যাগ নম্বর ঝোলানো। সেই নম্বরের মাধ্যমে পশুটির যাবতীয় তথ্য কম্পিউটারে ইনপুট দেওয়া। সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যারে থাকছে পশুটির খাবার, রোগবালাই থেকে শুরু করে সব তথ্য। এসব তথ্য বিবেচনা করেই নির্ধারণ করা হয় মূল্য।
খামারিরা বলছেন, ঈদ উপলক্ষে তাদের অধিকাংশ গরু বিক্রি হয়ে যাবে। ইতোমধ্যেও বিক্রি হয়েছে অনেক। বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যাপারীরা আসায় তাদের সামনেই লাইভ ওয়েট পদ্ধতি ব্যবহার করছেন খামারিরা। তা ছাড়া ঘাস, ভুট্টাসহ পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো হয় পশুগুলোতে। এতে করে মাংসের পুষ্টিগুণও ভালো পাওয়া যাবে বলে মনে করেন তারা।
তারা আরও জানিয়েছে, নিজ নিজ খামারে তারা দেশি সিন্ধি, গির, শাহিওয়াল ও ফ্রিজিয়ান জাতের গরু লালন পালন করেন। পশুর খাবার হিসেবে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাদ্য দেওয়া হয়; নিয়মিত করা হয় পরিচর্যা।
খামারগুলোয় দেখা যায়,প্রথমে গরুকে ওঠানো হয় ওজন স্কেলে। সেই স্কেলে গরুর ওজন উঠে এলে নির্ধারণ করা হয় মূল্য। ক্রেতারা এ পদ্ধতিতে খুশি। বিক্রেতারাও লাভের অংশ উঠে আসায় সন্তোষ প্রকাশ করছেন।
ছাগলনাইয়ার খামারি বাদল জানান, এবার কোরবানির জন্য ২০০ পশু পালন করছেন তিনি। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার খরচের পরিমাণ বেশি। বাইরে থেকে গরু না ঢুকলে লাভের মুখ দেখবেন তিনি।
পরশুরামের খামারি মো. মীর হোসেন মিরু বলেন, কোরবানির জন্য ১৫টি গরু ও দশটি ছাগল প্রস্তুত করছি। এখনকার মতো ঈদের বাজারদর অনুকূলে থাকলে খরচ বাদ দিয়ে বড় পরিমাণ লাভ করতে পারব।
আবদুল আজিজ সায়েম নামে এক ক্রেতা জানিয়েছেন, তার কাছে লাইভ ওয়েট পদ্ধতিটি দারুণ লেগেছে। বাজারে গিয়ে হাজার রকমের ভোগান্তির শিকার না হয়ে খামারে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পশু কেনা অনেক সহজ। কেনার পর আবার খামার থেকেই কোরবানির পশু বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
ডিজিটাল পদ্ধতিতে পশু বিক্রির মাধ্যমে খামারিরা ভালো দাম পাবেন বলে আশাবাদী জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। কর্মকর্তারা বলছেন, এবার দেশি গরুর চাহিদা বেশি। তা ছাড়া ক্রেতারাও দেশি গরু চান। মূলত হাটে গিয়ে গরু কিনতে নানা সমস্যা, চুরি-ছিনতাইয়ের ঝুঁকি; অজ্ঞান পার্টিসহ বিষয়গুলো ভোগান্তির। গরু ব্যবসায়ী, ক্রেতা-বিক্রেতাদের অচেতন করে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেওয়াসহ ক্ষতিকারক বিষয়গুলো যাতে না হয়, সে খেয়াল থেকে তারা এসব পদ্ধতি অনুসরণের চেষ্টা করছেন।
তারা আরও বলেন, খামারি ও প্রান্তিক পর্যায়ে লাইভ ওয়েট বা অনলাইনে কেনাকাটা অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত। ভারত থেকে ফেনীতে যাতে চোরা গরু না ঢোকে সে ব্যাপারেও তারা সতর্কতা অবলম্বন করছেন।
দাগনভূঞাঁর জুহান অ্যাগ্রো ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সফিয়ান বলেন, পশু বেচাকেনায় খামারে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতি নতুন, তবে ক্রেতারা এতে খুশি। আমরা খামারিরাও লাভের আশা করছি। সব ঠিক থাকলে ও এ পদ্ধতি চলমান থাকলে ক্রেতারা সাধারণও এ পদ্ধতিকে গ্রহণ করবেন।
লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে পশু বিক্রি করে লাভের আশা করলেও সীমান্ত দিয়ে চোরাপথে রোগাক্রান্ত গরু-মহিষ প্রবেশ বড় ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে বলেও মনে করেন খামারিরা। তাদের দাবি, অনেক সময়, অর্থ ও শ্রম খরচ করে তারা কোরবানির জন্য পশু তৈরি করলেও চোরাপথে আসা গরু-মহিষ তাদের ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে। এতে করে ন্যায্যমূল্য তারা পান না। অনেক সময় ক্রেতাও পাওয়া যায় না।
এ ব্যাপারে ছাগলনাইয়ার জাহান অ্যাগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী বাদল চৌধুরী বলেন, সারা বছর আমরা কষ্ট করে পশুগুলোকে পরম যত্নে খামারে হৃষ্টপুষ্ট করি। শেষ সময়ে বাজারে দেশের বাইরের গরু ঢোকে সীমান্ত দিয়ে। এটি মূলত আমাদের সর্বনাশ ডেকে আনে।
আজিজুল হক নামে আরেক খামারি বলেন, গতবছরও একদম শেষ সময়ে বাইরে থেকে গরু আসায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বার বার ক্ষতির মুখে পড়লে মুখ ফিরিয়ে নেবে। এ জন্য সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা প্রয়োজন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।