Home » বর্ষা এলেই আতঙ্কে দিন কাটে ফেনীর বন্যা কবলিত এলাকাবাসীর

বর্ষা এলেই আতঙ্কে দিন কাটে ফেনীর বন্যা কবলিত এলাকাবাসীর

by aadmin

এম শরীফ ভূঞা, আজকের সময় : 

বর্ষা এলেই আতঙ্কে দিন কাটে ফেনীর উত্তরের মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয় নদীপারের মানুষের। ভারতের উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল প্রতি বছরেই নিঃস্ব করে দিয়ে যায় তাদের। ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি, মাছের পুকুর সব ভেসে যায় বানের জলে। দুর্ভোগের এমন চিত্র প্রতি বছরের।

অথচ কেবলমাত্র ২০২১ সালে ভাঙনকবলিত স্থান মেরামতে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এভাবে প্রতিবছর ভাঙছে আর মেরামত হচ্ছে ১২২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বা মুহুরী বাঁধ। চিহ্নিত হয়েছে বাঁধের ২১ ঝুঁকিপূর্ণ স্থান। এমন তথ্য বিভিন্ন সময় জানান উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আকতার হোসেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের বন্যায় ২২ জায়গায় বাঁধ ভেঙে যায়। তখন বাঁধ মেরামতে প্রায় ২শ’৪৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়। ২০১৯ সালের বন্যায় ১৫ জায়গায় বাঁধ ভেঙে যায়। সেসময় মেরামতে প্রায় ১শ’ ৭৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়। ২০২০ সালের জুলাই মাসেও বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে যায়। তখন দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ৭শ মিটার বাঁধ মেরামত করা হয়।

অপরদিকে বানভাসি মানুষের হাহাকার চলছে বহুকাল ধরে। বাঁধভাঙা মানুষের স্বপ্নগুলোও একইভাবে ভাঙে। ভেসে যায় উজান হতে ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আবাদ, মাছের ঘের, নষ্ট হয় গৃহস্থালি পণ্য।

বর্ষায় ভারত হতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মানুষের ক্ষতিরোধে ২০০৪-০৫ অর্থবছরে নির্মাণ কাজ শুরু হয় মুহুরী বাঁধের।

উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আকতার হোসেন জানান, ১৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হয় ২০১১ সালে। পরশুরামের নিজকালিকাপুর হতে বাঁধটি শুরু হয়। মুহুরী নদীর পশ্চিম পাড়ে বাঁধটি রেজুমিয়া ব্রিজ পর্যন্ত তৈরি হয়। কহুয়া নদীর দুইপাড়ে ৩৪ কিলোমিটার, সিলোনিয়া নদীর পূর্বপাড়ে প্রায় ৩০ কি.মি. বাঁধ নির্মিত হয় ফুলগাজী উপজেলার বন্দুয়া ব্রিজ পর্যন্ত।

স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ (পাউবো) ও ঠিকাদারদের ব্যাপারে। একাধিক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি জানান, বাঁধ নির্মাণ সঠিক হয়নি। ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতে ঠিকাদারের যথাযথ তদারকি করেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এ প্রসঙ্গে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জানান, বাঁধ নির্মাণের পর তা পরিচর্যার জন্য বরাদ্দ পাওয়া যায় না। বেড়িবাঁধ নিয়মিত সংস্কার করা যায়নি বরাদ্দের অভাবে। ২০২০-২১ অর্থবছরে অনুন্নয়ন খাতে ১২২ কি.মি. বাঁধ সংস্কারে কোনো অর্থ বরাদ্দ আসেনি। বরাদ্দ এসেছে শুধু ভেঙে পড়া বাঁধ মেরামতে।

মুহুরী বাঁধ যথাযথ নকশা অনুযায়ী তৈরি হয়নি বলে বিশ্লেষকদের অভিযোগ রয়েছে। নদীর গভীরতা, প্রয়োজনীয় সেট ব্যাক না রেখেই তৈরি হয়েছে এটি। ফলে বারবার ভাঙনের কবলে পড়ছে উপচেপড়া পানির স্রোতে।

চলতি বছরের ৭ এপ্রিল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের স্থায়ী সমাধানে ৭৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন। শর্তগুলো প্রতিপালন সাপেক্ষে প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আক্তার হোসেন মজুমদার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সহসা টেকসই বাঁধ নির্মাণে স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় যেসব শর্ত পূরণ করে প্রকল্পটি পাঠাতে বলেছে তা সম্পন্ন করতে দীর্ঘ সময় লাগবে। যে কারণে প্রকল্পটি সহসা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া যাবে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, সোমবার (২০ জুন) সন্ধ্যা ৬টার দিকে মুহুরী-কহুয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ৭১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। প্রতিবারই বাঁধ ভাঙলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের আশ্বাস এবার মানতে নারাজ উত্তরাঞ্চলবাসী। প্রতিবছর বাঁধ ভেঙে বন্যার এ দুর্গতি থেকে মুক্তি চান তারা।

আরো খবর