ফেনী প্রতিনিধি :
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের আগেই স্নাতক চতুর্থ বর্ষের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মাস্টার্সের ভর্তি কার্যক্রম শেষ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ৪৭৭ জন শিক্ষার্থী। ফেনী সরকারি কলেজে মাস্টার্স শেষ পর্বে কোনো বিভাগে আসন খালি না থাকায় প্রিলিমিনারি পাস করা শিক্ষার্থীরা ভর্তির আবেদন করতে পারছেন না। এতে অনিশ্চিয়তার মুখে পড়েছে এ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-১৮ সেশনের স্নাতক শেষ করা শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স পর্যায়ে ভর্তি গত বছরের ডিসেম্বরে মাসেই সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৯-২০ সেশনের প্রিলিমিনারি শিক্ষার্থীদের ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি। এরমধ্যে মাস্টার্সের দুই ধাপে ভর্তি ইতোমধ্যে শেষ। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে রিলিজ স্লিপের আবেদন শুরু হয়েছে। যার শেষ হবে ৫ মার্চ। এ সময়ের মধ্যে কোন শিক্ষার্থী আবেদন করতে না পারলে মাস্টার্স এ ভর্তি হতে পারবেনা।
ফেনী কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কলেজের মাস্টার্স পর্যায়ে বাংলা বিভাগে ৯০টি, ইংরেজি বিভাগে ৫০টি ইতিহাস বিভাগে ৫০টি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১০০টি, দর্শনে ৫০টি, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ১৫০টি সমাজকর্মে ১৫০টি, অর্থনীতিতে ১৫০টি, হিসাববিজ্ঞানে ১৬০টি, ব্যবস্থাপনায় ১৬০টি, পদার্থবিজ্ঞানে ৫০টি, রসায়নে ৫০টি, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে ৫০টি, প্রাণীবিদ্যা বিভাগে ৫০টি এবং গনিত বিভাগে ৫০টি আসন রয়েছে। যার বেশিরভাগই ইতোমধ্যে পূরণ হয়ে গেছে। এদিকে সোমবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন ফেনী সরকারি কলেজের প্রিলিমিনারি শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স শেষ পর্বে ভর্তির সুযোগ দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রাথমিক আবেদন করলেও কলেজের আসন খালি না থাকায় আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে না। এছাড়া রিলিজ স্লিপের আবেদন শুরু হলেও মেধাতালিকার জন্য তারা আবেদন করতে পারেনি। এখন চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও ফেনীর কোনো কলেজে আবেদন করা যাচ্ছে না। ভর্তি হতে হলে কুমিল্লা কিংবা ঢাকার কোনো কলেজে আবেদন করতে হবে তাদের।
ফেনী সরকারি কলেজ সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর প্রিলি ও মাস্টার্সের ভর্তি একই সঙ্গে হয়ে থাকে। এবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মাস্টার্সে ভর্তি কার্যক্রম আগে শেষ করেছে। এতে নিয়মিত যারা অনার্স শেষ করেছে তারা ভর্তি হয়েছে। কিন্তু প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্স পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া হয়েছে অনার্সে ভর্তির পর। এখন কলেজের সবগুলো বিভাগের কোটা সম্পন্ন হওয়ায় শিক্ষার্থীরা কোনো বিভাগেই আবেদন করতে পারছে না।
সূত্র জানায়, নিয়মানুযায়ী একই সঙ্গে আবেদন করা হলে এক বিভাগে যতগুলো আসন রয়েছে তা থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পায় এবং সেই শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়। কিন্তু এবার আবেদন প্রক্রিয়া আলাদা হওয়াতে প্রিলিমিনারি শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারছেন না।
মানববন্ধনে কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের নুরুল করিম নামে একজন শিক্ষার্থী বলেন, প্রতিবার প্রিলির ফলাফল আগে দেওয়া হয়। পরে অনার্স চতুর্থ বর্ষের ফলাফল দেওয়া হয়। তারপর আবেদনের নোটিশ দেওয়া হতো। কিন্তু এবার অনার্সের আগে ফলাফল ঘোষণা করে ভর্তির নোটিশও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে প্রিলির শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেনা। আমার বিভাগে প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। আমি একজন হলে ফেনীর বাইরে গিয়ে ভর্তি হতে পারতাম। কিন্তু এ সমস্যা সব শিক্ষার্থীর। সবাইতো আর বাইরে যেতে পারবেনা। আমাদের যেকোন মূল্যে ভর্তির সুযোগ করে দিতে হবে।
কেএম মেহেরুন নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ৩২০ টাকা খরচ করে প্রাথমিক আবেদন করেছিলাম। কিন্তু এখন আবার রিলিজ স্লিপে আবেদন করতে হবে। তবে রিলিজ স্লিপে ফেনী কলেজের কোন নামই নেই। ফলে আমাদের ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে ফেনী সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ মোক্তার হোসেইন বলেন, শিক্ষার্থীদের বিষয়টি সমাধানে কলেজ কর্তৃপক্ষ আন্তরিক। এখানে শিক্ষার্থীদের ভুল নেই, তারা ফলাফল পেয়েছে দেরিতে। এজন্য আবেদন করতেই পারছেনা। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি দ্রুত সমধানের চেষ্টা করছি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশন সেলের সচিব সহকারী অধ্যাপক ড. আলী জাফর চৌধুরী বলেন, ফেনী কলেজের যে আসন সংখ্যা সেটি সম্পন্ন হয়ে গেছে। এজন্য প্রিলিমিনারি শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারছেনা। প্রচলিত যে নিয়ম রয়েছে সেটি অনুযায়ী ভর্তি হতে হবে। আসন খালি থাকলেই কেবল ভর্তির সুযোগ মিলবে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বিন কাশেম বলেন, মাস্টার্স প্রিলিমিনারির শিক্ষার্থীরা ভর্তির আবেদন করতে না পারার কারণ ফেনী কলেজে আগেই আসন সম্পন্ন হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে একদফায় ভর্তি শেষ হয়েছে। এতে অনার্সের যারা আবেদন করেছে তারা ভর্তি হয়ে যাওয়াতে সিট ফাঁকা নেই। এজন্য প্রিলিমিনারির শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি অবগত হয়েছি এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।