Home » প্রাইভেট টিচার আর কোচিং করলে স্কুল-মাদ্রাসার দরকার কি?

প্রাইভেট টিচার আর কোচিং করলে স্কুল-মাদ্রাসার দরকার কি?

by আজকের সময়

আজকের সময় ডেস্ক :

প্রতিষ্ঠানের ভেতরেই সিলেবাস শেষ করে পরীক্ষাসহ জীবনের জন্য জরুরি সব দক্ষতা ও জ্ঞান দিয়ে শিক্ষার্থীদের তৈরি করার কথা স্কুল-কলেজগুলোর। বাস্তবে এর ছিঁটে-ফোঁটাও নেই দেশের প্রায় সব স্কুল-কলেজে। রাজধানী থেকে শুরু করে গ্রাম- সবখানেই একই পরিস্থিতি। শিক্ষার্থীদের সামনে বিকল্প তাই প্রাইভেট টিচার আর কোচিং। এতে অভিভাবকদের খরচ করতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের বাড়তি অর্থ। প্রশ্ন উঠছে, প্রাইভেটই যদি পড়তে হবে, তবে স্কুল কেন?

অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে যে সারমর্ম মেলে- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে শিক্ষার্থীরা স্ব স্ব শিক্ষকদের কাছে এবং তাদের নিয়ন্ত্রিত কোচিং সেন্টারে বাড়তি অর্থ ব্যয় করে পড়তে বাধ্য হচ্ছে।

অভিভাবকদের প্রায় সবাইকেই ছেলেমেয়েদের পেছনে বাড়তি মোটা অংকের অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, স্কুল-কলেজে তাহলে কী হয়? শিক্ষকরা কী করেন? নিয়মতি পাঠদান করছেন না তারা? অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষকরা পাঠদানের নামে দায় সারেন। এ ব্যাপারে কিছু বললে উল্টো সন্তানের স্কুলে পড়াশোনার ক্ষতির ভয়। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের কাছে কিংবা কোচিংয়ে পড়াতে হচ্ছে সন্তানকে।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ‘শিক্ষা এখন বাণিজ্যিক রূপ নিচ্ছে। এ কারণেই স্কুলে না পড়িয়ে কোচিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন শিক্ষকরা। এটা শিক্ষাব্যবস্থার জন্য অশনিসংকেত। এমনটা প্রত্যাশিত ছিল না। এ থেকে উত্তরণ জরুরি। একজন শিক্ষক ক্লাসে পড়ালে কেন আবার সেই বিষয়ে শিক্ষার্থীকে কোচিংয়ে পড়তে হবে? গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে হবে।’ কোচিং বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করলেও মাঠ পর্যায়ে তার কোনো বাস্তবায়ন নেই বলে পর্যবেক্ষণ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবীর দুলু অভিযোগ করেন, কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সরকারের সদিচ্ছা নেই। তিনি বলেন, ওয়েবসাইটে কোচিং বন্ধে নীতিমালা জারি করেই দায় সেরেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কোচিং বন্ধে মনিটরিংয়ের জন্য জেলা, উপজেলা ও বিভাগ পর্যায়ে যে কমিটি থাকার কথা বলা হয়েছে তা কোথাও নেই বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কোচিংবাজ শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্য চালাচ্ছেন। কিন্তু কার্যত পাল্টা কোনো ব্যবস্থা নেই’।

কোচিং বন্ধে ২০১২ সালে নীতিমালা করে সরকার। নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম চলাকালীন শ্রেণিসময়ের মধ্যে কোনো শিক্ষক কোচিং করাতে পারবেন না।  কোনো শিক্ষক তার নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারবেন না। নীতিমালা অনুযায়ী অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে নিজ বাসায় পড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি লাগবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে লিখিতভাবে ছাত্রছাত্রীর তালিকা, রোল ও শ্রেণি উল্লেখসহ জানাতে হবে।

নীতিমালা না মানলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষক কোচিং-বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তার এমপিও স্থগিত বা বাতিল, বেতন ভাতাদি স্থগিত, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত, বেতন এক ধাপ অবনমিতকরণ, সাময়িক বরখাস্ত, চূড়ান্ত বরখাস্ত ইত্যাদি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরো খবর