এম শরীফ ভূঞা, ফেনী :
ফেনীর দাগনভূঞায় প্রথমবারের মতো প্রথমবারের মতো চার রঙের ফুলকপি চাষ তিনগুণ লাভ করেছেন হাসান আহম্মেদ। ইতিমধ্যে তিনি ২০ হাজার টাকা পুঁজি ব্যয় করেছেন ফুলকপি চাষে।
দাগনভূঞা উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা লুৎফল হায়দার রুবেল জানান, রঙিন ফুলকপির জন্য বাড়তি কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। রঙিন ফুলকপিতে পোকার কোনো আক্রমণ নেই। তাই কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। ফলে সবজি বিষমুক্ত রাখা সম্ভব হয়। এই কপি অনেক ভালো সেদ্ধ হয় এবং স্বাদও অনেক।
জানা যায়, দাগনভূঞা উপজেলার জগতপুর গ্রামের হাসান আহম্মেদ ২০১৪ সালে ভারতের ব্যাংলোর থেকে কম্পিউটার সাইন্সে বিএসসির পাঠ চুকিয়ে বাড়ি ফিরে আইটি ব্যবসা শুরু করেন। পাঁচ বছর আগে পরিবারের চাহিদা মেটাতে তিনি বাড়ির পাশে সবজি চাষের মাধ্যমে কৃষির প্রেমে পড়েন। এ বছর ঢাকা থেকে দেড় হাজার রঙিন ফুলকপির বীজ সংগ্রহ করে বাড়ির পাশে ৩৩ শতাংশ জমিতে বেগুনি ও হলুদ রঙের ফুলকপির চাষ করেন। এতে বীজ, সেচ, জৈব ও রাসায়নিক সারের খরচ বাবদ প্রতি কপিতে ব্যয় হয়েছে ১৫ টাকা। রঙিন ফুলকপির ব্যাপক চাহিদা থাকায় জমিতেই প্রতি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। প্রতিটি কপির ওজন হয়েছে দেড় থেকে ২ কেজি। এরই মধ্যে ৮০০ কপি বিক্রি করে পেয়েছেন ৮৫ হাজার টাকা। দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন অনেক কৃষক আগ্রহ নিয়ে নতুন এই ফুলকপি দেখতে আসছেন। অনেকেই আগামীতে এই কপি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
কৃষি উদ্যোক্তা হাসান আহম্মেদ বলেন, কৃষি প্রজেক্ট শুরুর পর রঙিন ফুলকপি চাষে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছি। মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে আমার সবজি বাগানে। দূর- দূরান্ত থেকে প্রতিদিন অনেক কৃষক আগ্রহ নিয়ে নতুন এই ফুলকপি দেখতে আসছেন। অনেকেই আগামীতে এই কপি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। অর্গানিক ভেজিটেবল পেইজে অনলাইনে মার্কেটিং করার পর জমিতেই বিক্রি হচ্ছে সবজি, আড়তে বা খুচরা বাজারে নিতে হচ্ছে না। এবারের অভিজ্ঞতা নিয়ে আগামীতে ব্যাপক আকারে রঙিন ফুলকপি আবাদের পরিকল্পনা রয়েছে। কোনো কৃষক সহায়তা চাইলে সব ধরনের সহায়তা করব।
ফেনীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোহাম্মদ একরাম উদ্দিনের নেতৃত্বে জেলা ও উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা নতুন জাতের রঙিন ফুলকপির মাঠ পরিদর্শন করে উদ্যোক্তার সঙ্গে তথ্য ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, গতানুগতিকের বাইরে নতুনের প্রতি ভোক্তাদের আকর্ষণ বেশি, তাই লাভও অধিক।
দাগনভূঞা ইয়ুথ সোসাইটির প্রকাশনা সম্পাদক এটিএম আতিকুল ইসলাম জানান, বেকার যুব সমাজ কৃষিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বনির্ভর হওয়া এখন যুগোপযোগী দাবি।
জগতপুর গ্রামের কৃষক মো. ইব্রাহিম বলেন, আগামী বছর আমিও এ রঙিন ফুলকপি চাষে আগ্রহী। এ জাতের বীজ জেলা পর্যায় পাওয়া গেলে তবে আমিও রঙ্গিন ফুলকপি চাষ করব।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ফেনী জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা নয়ন মনি সূত্রধর বলেন, রঙিন ফুলকপির মধ্যে বিটা ক্যারোটিন এবং এন্টি অক্সডিন্টে থাকার কারণে স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জুলফিকার জানান, আগামীতে এই কপির চাষাবাদ বাড়াতে কৃষককে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হবে। এ জাতের কপি রোপণের ৮০-৮৫ দিনের মধ্যে বিক্রি করা যায় এবং সাধারণ কপির মতোই চাষাবাদ করতে হয় শুধু জৈব সার প্রয়োগ করে।