Home » গৌরবদীপ্ত স্বাধীনতা

গৌরবদীপ্ত স্বাধীনতা

by আজকের সময়

আজকের সময় প্রতিবেদক :

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সর্বস্তরের সব মানুষের অংশগ্রহণ ছিল। মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাংলার মানুষের জনযুদ্ধ। সশস্ত্র জনযুদ্ধের মধ্য দিয়েই মূলত বাংলার মানুষ বর্বর হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম চলেছে সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক নেতৃত্বে। নিয়মিত বাঙালি সেনাবাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী এবং সাধারণ মানুষের দ্বারা গঠিত মুক্তিফৌজ মুজিবনগরের রাজনৈতিক নেতৃত্ব দ্বারা সম্পূর্ণভাবে পরিচালিত হয়েছে। গণমানুষের জনআকাঙ্ক্ষার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। এ অর্জনকে অর্থবহ করতে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে। পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আল শামসদের মানবতাবিরোধী ভূমিকাকে যেন আমরা একটুও ভুলে না যাই। পাকিস্তানি হানাদারদের প্রেতাত্মারা আজও স্বাধীন বাংলাদেশে ছদ্মবেশে সক্রিয় দেশবিরোধী অপকর্মে, তাদের চিহ্নিত করে সতর্ক থাকাটাও বিশেষ জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করি।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী উদযাপন করছি আমরা, এ এক আনন্দঘন অনুভূতি। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস যেমন গৌরবের, তেমনি বেদনারও। এই দিনটিকে ঘিরে রয়েছে অনেক দুঃখ-কষ্ট-বেদনা, রয়েছে অনেক উচ্ছ্বাস, আবেগ, অনুভূতি আর আনন্দ-বেদনার মিশ্রণ। অনেক রক্ত ও আত্মত্যাগ, অনেক সংগ্রাম, অনেক বেদনার বিনিময়ে এসেছে এ স্বাধীনতা। আমরা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সেই সব জানা-অজানা শহীদকে, যাঁরা তাঁদের বর্তমানকে বিসর্জন দিয়ে গেছেন এ দেশের ভবিষ্যৎকে সুন্দর করার জন্য। এ দেশের বীর যোদ্ধা যারা দেশের জন্য আত্মোৎসর্গ করেছেন, সম্ভ্রম হারিয়েছেন যে সকল মা-বোন, প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন সেসব বীর সূর্যসৈনিকদের জানাই অজস্র সালাম আর শ্রদ্ধা। ঐতিহাসিক এই দিনে জাতীয় চার নেতাসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা শ্রদ্ধাবনত মস্তকে স্মরণ করি। তিনি শুধু বাংলাদেশের নন, বিশ্বের মহান নেতা ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে (ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ২০১২: ৪৮) লিখেছেন, সুজলা, সুফলা বাংলাদেশ সম্পদে ভর্তি…। তবুও ওরা [বাঙ্গালি জাতি] গরিব, কারণ যুগ যুগ ধরে এরা শোষিত হয়েছে নিজের দোষে। নিজকে এরা চেনে না, আর যত দিন চিনবে না এবং বুঝবে না তত দিন এদের মুক্তি আসবে না।

নিজেকে চেনার এই দিবসটি আমাদের কাছে মুক্তির প্রতিজ্ঞায় উদ্দীপ্ত হওয়ার ইতিহাস জানান দেয়। কারণ স্বাধীনতার অর্থ শুধু রাষ্ট্রীয় স্বাতন্ত্র্য নয়, স্বাধীনতা মানে সব ধরনের বৈষম্য থেকে মুক্তি ও সুশাসনের নিশ্চয়তাও। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তির ঘোষণা একই বাক্যে উচ্চারণ করেন। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক বিকাশে সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে তিনি শুধু আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তির ঘোষণাই দেননি, এতে নানা বিষয়ে তাঁর মৌলিক চিন্তার প্রকাশও ঘটে। তাঁর যাপিত জীবন, কর্ম ও আদর্শের অনুসন্ধানকালে তেমনইটাই দৃশ্যমান হয়।

আমাদের সময় এসেছে ফিরে দেখার, যে মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে সেদিন আমরা চেয়েছিলাম একটি স্বাধীন পুণ্যভূমি, বীর শহীদেরা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে, এ দেশ কি তা দিতে পেরেছে? কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে আমরা কি পৌঁছাতে পেরেছি? এ ক্ষেত্রে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের মতামতও প্রণিধানযোগ্য। তাঁরা বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেকেই দেশমাতৃকাকে হানাদার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষার জন্যে কলম ছেড়ে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন। যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছিলেন। বর্তমান প্রজন্মকে অস্ত্র ধরতে হবে না। তাদের কলম যুদ্ধ করতে হবে, মেধার যুদ্ধ করতে হবে। সেই যুদ্ধ হবে দেশের ভিতরে এবং দেশের বাইরে। আর সেই যুদ্ধের মাধ্যমে গৌরব ছিনিয়ে আনতে হবে।

আমাদের দেশের নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও দেখি তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা, উৎকর্ষের প্রমাণ। আমার মতো শিক্ষকদের জীবনে প্রায়ই দেখা মেলে, তরুণ প্রজন্মের মাঝে যে সৃষ্টিশীলতা আছে, যে উদ্যম আছে, যে প্রত্যাশা তাদের মাঝে কাজ করে, তা যদি আমরা কিছুটা তাদেরকে প্রাণিত, প্রভাবিত করতে পারি, দেখা যায় যে তারা বড় বড় অর্জন নিয়ে আসতে পারবে। তরুণ প্রজন্ম সব সময় সৃষ্টিশীল কাজ করে। তাদের মাঝে নিত্যনতুন আবিষ্কারের প্রবণতা আমরা নিশ্চয় লক্ষ করে থাকি। আমরা যে সীমাবদ্ধতা নিয়ে বড় হয়েছি, তা ছাড়িয়ে যাওয়ার অধিকার তাদের রয়েছে। কারণ তাদের মাঝে সম্ভাবনা আছে। বিশেষ করে করোনা-উত্তর যে পৃথিবী, এখানে আমাদের তরুণদের ওপর নির্ভর করতে হবে। কারণ, করোনার মাঝে আমরা যে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এসেছি, করোনা-উত্তর পৃথিবী কিন্তু একেবারেই নতুন হবে। কাজেই এই নতুন পৃথিবীতে তরুণ প্রজন্মকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। তাই তাদের প্রস্তুত করতে হবে এবং তারাই দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেবে। এটিই প্রত্যাশা করি। নিশ্চয়ই আমরা আমাদের দেশমাতৃকার প্রতি প্রকৃত দায়িত্ব সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন।

আরো খবর