আজকের সময় ডেস্ক: ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চরভেলামারী ঘাট এলাকায় আওয়ামী লীগের এক নেতাসহ কয়েকজন ব্যক্তি ব্রহ্মপুত্র নদের চরের জমি খনন করে অবৈধভাবে বালু তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। এভাবে বালু তুলে নিয়ে যাওয়ায় ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে এবং চরভেলামারী গ্রামের বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে।
চরভেলামারী গ্রামের ছয়-সাতজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিনে ট্রাক্টরে করে বালু পরিবহন করা হয়। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে বড় বড় ড্রাম ট্রাকে করে বালু পরিবহন করা হয়।
চর বেতাগৈর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের পর থেকে চরভেলামারী গ্রামে বালু তোলার ইজারা ডাক বন্ধ রয়েছে। ইজারা ডাক বন্ধ হলেও বালু তোলা কখনো বন্ধ হয়নি। ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শমসেরসহ ৩০-৩৫ জন এ ঘটনায় জড়িত।
অবৈধভাবে বালু তোলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা শমসের আলী বলেন, ‘ভাই, এসব নিয়ে পত্রিকায় লেখালেখি করার কী দরকার। আমরা কিছু একটা করে খাচ্ছি, তাতে আপনাদের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। চলেন, আলোচনা করি।’
এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে জানতে চাইলে উপজেলার চর বেতাগৈর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মো. আবুল হাসেম প্রথম আলোকে বলেন, ভাই, ‘যাঁরা বালু তোলার সাথে জড়িত, তাঁরা গরিব মানুষ। কিছু একটা করে খাচ্ছে। আপনি আইসেন, একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’ কী ব্যবস্থা করবেন, জানতে চাইলে আবুল হাসেম বলেন, ‘আমি একটা মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি। সাক্ষাতে আপনার সাথে এ বিষয়ে কথা বলব।’
সরেজমিনে চরভেলামারী গ্রামে দেখা গেছে, বালুভর্তি ট্রাকগুলো নান্দাইল-ত্রিশাল সওজের সড়ক ধরে বিভিন্ন গন্তব্যে চলে যাচ্ছে। এ ছাড়া ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মধুপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সওজের সেতুর কাছের একটি নিচু জমি ট্রাকে করে নিয়ে আসা বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। মাসুদ মিয়া নামের এক ব্যক্তি বালু ভরাট করার কাজ তদারকি করেন বলে স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। তবে স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছ থেকে মুঠোফোন নম্বর না পাওয়ায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
এ বিষয়ে চর বেতাগৈর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. ফরিদ হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ঘাট এলাকায় সরকারিভাবে কোনো ইজারা ডাক নেই। তবে এখন কারা বালু বিক্রির ব্যবসা করছেন, তা তিনি জানেন না।
চরভেলামারী গ্রামে চর খনন করে বালু তোলা বন্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে নান্দাইলের ইউএনও মোহাম্মদ আবুল মনসুর বলেন, ওই এলাকায় অবৈধভাবে বালু তোলা বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালাচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার জেলা থেকে একজন ম্যাজিস্ট্রেট এসে চর খননে ব্যবহৃত একটি ভেকু যন্ত্র অচল করে দিয়েছেন। তবে ওই সময় সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, শুধু প্রশাসনের একার পক্ষে বালু লুটপাট বন্ধ করা সম্ভব নয়। নদের সমতল চর রক্ষার জন্য এলাকাবাসীকে সামাজিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে।