ফেনী জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ২ হাজার ৪৭ রোগীকে অপারেশনের জন্য লম্বা সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। যাদের বেশির ভাগই হার্নিয়া, টিউমার, পাইলস ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত। তবে সামর্থ্যবানরা বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যাদের সামর্থ্য নেই, অস্ত্রোপচার না করায় তাদের রোগ জটিল আকার ধারণ করছে। অনেকেই বিনা চিকিৎসায় কর্মক্ষমতা হারিয়ে মৃত্যুর পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেক রোগী অসুস্থতার কারণে আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, জনবল সংকট, অপারেশন থিয়েটার স্বল্পতায় রোগীজট দীর্ঘ হচ্ছে। বছরের পর বছর এ অবস্থা চলতে থাকলেও সহসাই মুক্তির উপায় দেখছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হার্নিয়া রোগ নিয়ে বছরখানেক ধরে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করে আসছেন সিএনজি অটোরিকশাচালক জাফর উল্লাহ। সম্প্রতি অসহ্য ব্যথা শুরু হলে তিনি ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ছুটে এলে তাকে সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্টের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে ২০২৩ সালের ২৭ মে হার্নিয়া অপারেশনের জন্য আসতে বলেন। অস্ত্রোপচারের জন্য আরো আট মাস অপেক্ষা করতে হবে জেনে হতবাক হন জাফর উল্লাহ। একদিকে অসুস্থতার কারণে অটোরিকশা চালাতে না পেরে পরিবারের আয়-রোজগার বন্ধ, অন্যদিকে আট মাস ব্যথার যন্ত্রণা সহ্য করা এবং ওষুধের খরচ কীভাবে মেটাবেন এ নিয়ে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন তিনি।
শাহ নেওয়াজ নামে টিউমার আক্রান্ত এক দিনমজুর জানান, পায়ের গোড়ালিতে থাকা টিউমারটিতে হঠাৎ অসহ্য ব্যথা শুরু হলে তিনি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। হাসপাতালে টিউমার অপসারণের জন্য আগামী বছরের জুনে আসতে বলা হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও ১০০ শয্যার জনবল দিয়েই চলছে।
কর্তৃপক্ষ জানায়, হাসপাতালে ছয়দিন অপারেশন করা হয়। সার্জারি, অর্থোপেডিক, গাইনি ও চক্ষু বিভাগের জন্য অপারেশনের দিন ভাগ করা আছে। এর মধ্যে সপ্তাহের প্রতি রবিবার ও বুধবার সার্জারি বিভাগের রোগীদের অপারেশন করা হয়। সে হিসেবে সপ্তাহে দুদিন করে মাসে আট দিনে ছোটবড় ১৫০-২০০ রোগীকে অপারেশন করানোর সুযোগ পায় সার্জারি বিভাগ। অথচ প্রতি মাসে এখানে অপারেশনের জন্য আসেন দ্বিগুণেরও বেশি রোগী। ভয়াবহ রোগী জটের কারণে এ হাসপাতালে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত অপারেশনের কোনো সিরিয়াল খালি নেই।
হাসপাতালের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, সেপ্টেম্বরে ৬০ ব্যক্তিকে মেজর ও ১২৭ ব্যক্তিকে ছোট অপারেশন করেছে সার্জারি বিভাগ। বড় অপারেশনের আগে-পরে ছোট অপারেশনের রোগীদের কাজ করা হয়। এক্ষেত্রে কখনো কখনো বড় অপারেশনে অতিরিক্ত সময় লেগে গেলে ছোটখাটো সমস্যা নিয়ে আশা রোগীদের সুযোগ দেয়া সম্ভব হয় না।
হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট কামরুজ্জামান কিরণ জানান, হাসপাতালে বর্তমানে ২ হাজার ৪৭ রোগীকে অস্ত্রোপচারের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছে। আগামী বছরের জুন পর্যন্ত অপারেশনের সিরিয়াল খালি নেই। হাসপাতালের জনবল সংকট ও অপারেশন থিয়েটার স্বল্পতার কারণে তিনি সপ্তাহে দুদিন অপারেশন করতে পারেন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় হতাহত রোগী, জীবন সংকটাপন্ন রোগী ও জটিল রোগীদের তাৎক্ষণিক অপারেশনের ব্যবস্থা করতে হয়। এর আগে-পরে হার্নিয়া ও টিউমারসহ ছোটখাটো রোগীদের অপারেশন করা হয়। জটিল রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হয়। বাকি রোগীদের নির্ধারিত অপারেশনের তারিখ পর্যন্ত বাড়িতে থেকে ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেয়া হয়।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল খায়ের মিয়াজী জানান, এখানে জনবল ও অবকাঠামো সংকট নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশপাশের অনেক জেলার রোগীরা এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ছুটে আসেন। এত বেশি রোগীর চাপ নেয়ার মতো অবকাঠামো, জনবল ও চিকিৎসক এ হাসপাতালে নেই।
ফেনীর সিভিল সার্জন রফিক উস ছালেহীন জানান, যাতায়াত সুবিধার কারণে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আশপাশের মানুষও চিকিৎসা নেয়ার জন্য ভিড় জমান। কিন্তু সে অনুযায়ী এ হাসপাতালে জনবল পদায়ন করা যায়নি। হাসপাতালের সার্জারি বিভাগ ও তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।